কতো দিন দেখি না তোমায়

আশুলিয়া, সাভার

হাসপাতালের পাশ দিয়ে লম্বা এবং সরু যে গলিটা গেছে, একদিন ফেব্রুয়ারির শীতে, খুব সকালে সেখানে তোমার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম। বেশিক্ষণ না। মিনিট বিশেকের অপেক্ষার পর এসেছিলে তুমি। ক্যাটওয়াক করতে করতে। ক্যাটওয়াকই তো ছিলো, নাকি?

আজ হয়তো তুমি তা স্বীকার করতে পারবে না। কারণ আছে। এতোদিন পর তোমার হয়তো সে কথা মনেই নেই। হাসপাতাল, সেই সরু গলি, একটা অপ্রত্যাশিত ফেব্রুয়ারি, তার চেয়েও বেশি অপ্রত্যাশিত আমি; তোমার এ সব ভুলেই যাওয়ার কথা।

তখন আমার ফিনফিনে দাড়ি- গোঁফ। না কিশোর না যুবক বয়স। তখন উন্মাদের মতো ছুটে চলে যাওয়ার বয়স ছিলো। সেই বয়সে যতো পিছুটান, আদর- মায়া; সব ফেলে তোমার কাছে চলে যাওয়া যেতো।

কিন্তু তোমার আপত্তি ছিলো অনেক। বাচ্চা ছেলেকে যেভাবে একটা চকোলেট ধরিয়ে দিয়ে এদিক ওদিক পাঠিয়ে দেয়া যায়, তুমিও তেমন করতে আমার সঙ্গে। এটা ওটা বলে থামিয়ে রাখতে আমার উম্মাদনা। তোমার প্রতি দুর্ণিবার আকর্ষণটা তাতে দমেনি কখনো।

সে দিন, তোমার অপ্রত্যাশিত ফেব্রুয়ারির সকালেই তো একা একা আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিলো। তাই না? পুরো একটা রাত একটা অচেনা জায়গায় কাটিয়ে দেয়ার পরের দিন সকালে, তুমি ক্যাটওয়াক করতে করতে এলে; দৃশ্যটা ভুলিনি। তবে ঝাপসা হয়ে গেছে। সময় কম গেলো না। মহাকালের হিসেবে হয়তো এক পলক, কিন্তু ছোট্ট মানবজীবনের হিসেবে অনেক অনেক দিন চলে গেছে।

তোমার সঙ্গে শেষ দেখা হলো কোথায়? মনে নেই। আরো একটা ফেব্রুয়ারি যখন ফুরিয়ে আসছে, না শীত ও না গরমের অদ্ভুত সময়ে যখন ভেসে বেড়াচ্ছি, তোমার কথা মনে পড়ছে। তোমাকে কতো কতো দিন ধরে দেখি না, তা মনে পড়ছে।

তোমার কি এই রকম হয়? যে শহরে তুমি এখন থাকো, সেখানে এই সময়ে প্রচণ্ড গরম পড়ে, গুগল ওয়েদার তাই বলছে। সেখানে স্মৃতি-টিতি মনে পড়ার মতো কোনো ব্যাপার ঘটে? কুয়াশায় মুড়িয়ে কখনো সকাল নামে? কিংবা লোকে দেখে ফেলবে, এই ভয়ে প্রেমিকের হাত না ধরে হাঁটাহাঁটির কোনো দৃশ্য জন্ম দেয় তোমার শহর?

প্রশ্ন তো করে যাচ্ছি, কিন্তু উত্তর আসবে কোত্থেকে? একটা আশ্চর্য ব্যাপার কি জানো, এই সভ্যতার যুগে মিসাইল ছুড়লে ঠিকঠাক তা গিয়ে পড়ে শত্রুর মাথায়। কিন্তু বন্ধুকে, প্রাণের কাছের মানুষটাকে একটা চিঠি পাঠানো যায় না! এই রকম সভ্যতার জন্য আমার করুণা হয়। যে সভ্যতা ধ্বংসের কথা শুনলে লাফিয়ে উঠে, ধ্বংসের নেশায় মাতাল হয়ে যায়, কিন্তু ভালোবাসাকে ভয় পায়। ভালোবাসার পাগল মানুষগুলোর জন্য সব কিছু সংকুচিত করে আনে।

কতো দিন ধরে যে তোমাকে দেখি না, তোমার ঠোঁট বাঁকিয়ে কথা বলা, আমাকে যতোটা সম্ভব এড়িয়ে চলার জোর প্রচেষ্টা এবং এ রকম আরো কতো কিছু যে কাছ থেকে দেখতে পারি না…! আচ্ছা, তখন যদি একবারও বুঝতে পারতাম, তুমি আমার অনন্ত আফসোস হযে থাকবে, আমি কি ফিরে যেতে পারতাম, তোমার মতো?

আমাকে কেনো তোমার মতো শক্তিমান করে বানানো হয়নি? প্রশ্ন তো করছি, কিন্তু উত্তর দিবে কে..? তুমি?

ফোন নম্বর তো আছে তোমার কাছে…!

Comments

  1. সত্যিই এমন সভ্যতার জন্য করুণা হয়...

    ReplyDelete

Post a Comment