গুলশান, ঢাকা
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধ্যায়টা শেষ হয়ে গেছে। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আড্ডাবাজিও কমে এসেছে। আমরা মজে উঠেছি নতুন আড্ডায়। যেখানে এখন কেবলই তনু-সংক্রান্ত আলোচনা। যে আলোচনায় টগবগ করে আবেগ। যে আলোচনায় থাকে মানবিকতার মুখরোচক বুলি। যে আলোচনার বড় একটা অংশজুড়ে থাকে তনুর জন্য বিচার চাওয়ার হাহাকার। আমরা সবাই বিচার চাই। আমরা অপরাধীর গ্রেপ্তার চাই এবং আমরা সবাই তনুর আত্মার প্রশান্তি চাই। কিন্তু আমাদের আড্ডায় সমস্যার উৎসস্থল নিয়ে আলোচনা হয় না। বহু কথা বলেও না বলা থেকে যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা।
সেই কথাটা আসলেই কতটা গুরুত্বপূর্ণ; তা নিয়ে ভাববেন চিন্তাবিদরা। আমি কেবল পারি বিষয়টা সামনে আনতে। আমার আগেও অনেকে এটা নিয়ে কথা বলেছেন। কমবেশি আলোচনা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজটা হয়নি। আমার এই লেখাতেই যে কাজের কাজটা হয়ে যাবে, সেটা প্রত্যাশা করি না। তারপরও বিবেকের তাড়না এবং সমাজ বদলে ফেলার ব্যক্তিগত জেদ থেকে লিখতে বসলাম।
ধর্ষণ ও খুন- এই দুই পাশবিকতার প্রথম ও একমাত্র শিকার তনু নন। তার আগেও বহু নারী এই বাংলাদেশে এমন নৃশংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের বিচার চেয়ে পত্রিকার পাতায় গরম গরম প্রতিবাদের খবর ছাপা হয়েছে। নির্যাতিতের বাবা- মার আবেগঘন সাক্ষাৎকার আমরা ছাপার অক্ষরে পড়েছি। টিভির পর্দায় তাদের গগণবিদারী কান্নার আওয়াজ শুনেছি। এই পড়তে পড়তে এবং শুনতে শুনতেই একদিন তনু এলেন নতুন খবর হয়ে। আবার পুরোনো দৃশ্য নতুন করে মঞ্চায়ন হতে লাগল। এবার সব কিছু একটু জোরালো হলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সেই প্রমাণটা আমরা নতুন করে প্রত্যক্ষ করলাম।
এখন কথা হলো ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়ে পৃথিবী ছাড়া নারীদের তালিকার দৈর্ঘ্য আর কতটা বাড়লে তাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ? এই অসভ্যতা এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আরো কতবার সামনে চলে এলে আমরা সতর্ক হবো? নাকি এই অসভ্যতার শেষ নেই?
তনুরা খুন হয়ে যাওয়ার পর আমরা আন্দোলনে নামি, বিচার চাই। এই সব ঘটনায় খবরের কাগজের কাটতি বাড়ে, অনলাইন সংবাদমাধ্যমের পেজভিউ লাফিয়ে উঁচুতে উঠে, টিভিওয়ালাদের টিআরপি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ঘটনাটা শেষ হয় কীভাবে আমরা তার কোনো খবর পাই না। বিচারই যে হয় না। এভাবে হাজার হাজার তনু আমাদেরকে অভিশাপ দিয়ে চলে যাবেন, কিন্তু পরিস্থিতি বদলাবে না; যদি না আমরা ঠিকঠাক বিচার করতে পারি। তনুর আগেও বহু নারী আমাদের লজ্জা দিয়ে চলে গেছেন। তাদের কজনের বিচার আমরা করতে পেরেছি? কজনের পরিবারকে প্রশাসন স্বস্তির আনন্দ দিতে পেরেছে? আমি তাই বলি যে, তনু হত্যার বিচার আমরা চাইব, তার আগে চাইবো বিচারহীনতার বিচার। বিচারহীনতার অসভ্য সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মুখরোচক বুলির চেয়ে বেশি দরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। যা করতে হবে প্রশাসনের।
তো প্রশাসন কি সেটা করছে? তনুর ঘটনায় তার পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে এক খণ্ড জমির আশ্বাস। তনুকে ধর্ষণ করে খুন করেছে এক মানব-পিশাচ আর তার পরিবারকে ধর্ষণের কষ্ট দিয়েছে খোদ প্রশাসন। কই আমরা তো প্রশাসনের এমন চরম ঘৃণ্য পদক্ষেপের বিচার চাইছি না! তনুর হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে তার মা- বাবাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তনুর সঙ্গে ওর পরিবারের কারো 'সম্পর্ক' ছিল কিনা বা তাকে কেন আগে বিয়ে দেওয়া হয়নি; এ ধরনের প্রশ্ন! এই প্রশাসনের বিচার চাইবে কে, করবেই বা কে?
তনুর ঘটনার দুদিন আগে ও পরে আরো কিছু নির্মম ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটা ঘটনা ছিল ছেলের সামনে মাকে উলঙ্গ করে মাথার চুল ফেলে দেয়া। আরেকটা ঘটনায় বাজে সম্পর্কের অভিযোগে এলাকার চেয়ারম্যান মাথার চুল ফেলে দিয়েছেন ভাবি-দেবরের। এ ঘটনায় মামলা করেছেন ওই দুর্ভাগা নারীর স্বামী। ঘটনা ঘটেছে কিন্তু সন্দেহের বসে। শুধু অভিযোগ ছিল, প্রমাণ ছিল না। ভাবা যায়!
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙার সময়টা আসলে এখন। এই সময়টা যদি আমরা কাজে না লাগাই, তবে সামনে আসবে আরো ভয়াবহ সব ঘটনা। তখন চুপচাপ হজম করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা দেখে ঈর্ষা করে উন্নত বিশ্ব। ক্রিকেটে আমরা কাঁপিয়ে দেই বড় বড় দলকে। আমাদের এত এত গর্ব সব লজ্জায় পরিণত হচ্ছে বিচারহীনতার অসভ্যতায়। এখন তাই সময় হলো অন্য বিচার চাওয়ার। যে বিচার হবে বিচারহীনতার। চলুন, আমরা এবার নতুন আড্ডাবাজি শুরু করি। যে আড্ডায় কেবল বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আমাদের বিচার চাওয়ার দাবি থাকবে। তবেই আমাদের মানবিকতা অর্থ পাবে, আমাদের হাহাকার যৌক্তিক হবে।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধ্যায়টা শেষ হয়ে গেছে। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের আড্ডাবাজিও কমে এসেছে। আমরা মজে উঠেছি নতুন আড্ডায়। যেখানে এখন কেবলই তনু-সংক্রান্ত আলোচনা। যে আলোচনায় টগবগ করে আবেগ। যে আলোচনায় থাকে মানবিকতার মুখরোচক বুলি। যে আলোচনার বড় একটা অংশজুড়ে থাকে তনুর জন্য বিচার চাওয়ার হাহাকার। আমরা সবাই বিচার চাই। আমরা অপরাধীর গ্রেপ্তার চাই এবং আমরা সবাই তনুর আত্মার প্রশান্তি চাই। কিন্তু আমাদের আড্ডায় সমস্যার উৎসস্থল নিয়ে আলোচনা হয় না। বহু কথা বলেও না বলা থেকে যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা।
সেই কথাটা আসলেই কতটা গুরুত্বপূর্ণ; তা নিয়ে ভাববেন চিন্তাবিদরা। আমি কেবল পারি বিষয়টা সামনে আনতে। আমার আগেও অনেকে এটা নিয়ে কথা বলেছেন। কমবেশি আলোচনা করেছেন। কিন্তু কাজের কাজটা হয়নি। আমার এই লেখাতেই যে কাজের কাজটা হয়ে যাবে, সেটা প্রত্যাশা করি না। তারপরও বিবেকের তাড়না এবং সমাজ বদলে ফেলার ব্যক্তিগত জেদ থেকে লিখতে বসলাম।
ধর্ষণ ও খুন- এই দুই পাশবিকতার প্রথম ও একমাত্র শিকার তনু নন। তার আগেও বহু নারী এই বাংলাদেশে এমন নৃশংসতার শিকার হয়েছেন। তাদের বিচার চেয়ে পত্রিকার পাতায় গরম গরম প্রতিবাদের খবর ছাপা হয়েছে। নির্যাতিতের বাবা- মার আবেগঘন সাক্ষাৎকার আমরা ছাপার অক্ষরে পড়েছি। টিভির পর্দায় তাদের গগণবিদারী কান্নার আওয়াজ শুনেছি। এই পড়তে পড়তে এবং শুনতে শুনতেই একদিন তনু এলেন নতুন খবর হয়ে। আবার পুরোনো দৃশ্য নতুন করে মঞ্চায়ন হতে লাগল। এবার সব কিছু একটু জোরালো হলো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যে ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছে, সেই প্রমাণটা আমরা নতুন করে প্রত্যক্ষ করলাম।
এখন কথা হলো ধর্ষণ ও খুনের শিকার হয়ে পৃথিবী ছাড়া নারীদের তালিকার দৈর্ঘ্য আর কতটা বাড়লে তাদের অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে বাংলাদেশ? এই অসভ্যতা এবং তৎপরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ আরো কতবার সামনে চলে এলে আমরা সতর্ক হবো? নাকি এই অসভ্যতার শেষ নেই?
তনুরা খুন হয়ে যাওয়ার পর আমরা আন্দোলনে নামি, বিচার চাই। এই সব ঘটনায় খবরের কাগজের কাটতি বাড়ে, অনলাইন সংবাদমাধ্যমের পেজভিউ লাফিয়ে উঁচুতে উঠে, টিভিওয়ালাদের টিআরপি বৃদ্ধি পায়। কিন্তু ঘটনাটা শেষ হয় কীভাবে আমরা তার কোনো খবর পাই না। বিচারই যে হয় না। এভাবে হাজার হাজার তনু আমাদেরকে অভিশাপ দিয়ে চলে যাবেন, কিন্তু পরিস্থিতি বদলাবে না; যদি না আমরা ঠিকঠাক বিচার করতে পারি। তনুর আগেও বহু নারী আমাদের লজ্জা দিয়ে চলে গেছেন। তাদের কজনের বিচার আমরা করতে পেরেছি? কজনের পরিবারকে প্রশাসন স্বস্তির আনন্দ দিতে পেরেছে? আমি তাই বলি যে, তনু হত্যার বিচার আমরা চাইব, তার আগে চাইবো বিচারহীনতার বিচার। বিচারহীনতার অসভ্য সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মুখরোচক বুলির চেয়ে বেশি দরকার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ। যা করতে হবে প্রশাসনের।
তো প্রশাসন কি সেটা করছে? তনুর ঘটনায় তার পরিবারকে নগদ ২০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে এক খণ্ড জমির আশ্বাস। তনুকে ধর্ষণ করে খুন করেছে এক মানব-পিশাচ আর তার পরিবারকে ধর্ষণের কষ্ট দিয়েছে খোদ প্রশাসন। কই আমরা তো প্রশাসনের এমন চরম ঘৃণ্য পদক্ষেপের বিচার চাইছি না! তনুর হত্যার তদন্ত করতে গিয়ে তার মা- বাবাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তনুর সঙ্গে ওর পরিবারের কারো 'সম্পর্ক' ছিল কিনা বা তাকে কেন আগে বিয়ে দেওয়া হয়নি; এ ধরনের প্রশ্ন! এই প্রশাসনের বিচার চাইবে কে, করবেই বা কে?
তনুর ঘটনার দুদিন আগে ও পরে আরো কিছু নির্মম ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে একটা ঘটনা ছিল ছেলের সামনে মাকে উলঙ্গ করে মাথার চুল ফেলে দেয়া। আরেকটা ঘটনায় বাজে সম্পর্কের অভিযোগে এলাকার চেয়ারম্যান মাথার চুল ফেলে দিয়েছেন ভাবি-দেবরের। এ ঘটনায় মামলা করেছেন ওই দুর্ভাগা নারীর স্বামী। ঘটনা ঘটেছে কিন্তু সন্দেহের বসে। শুধু অভিযোগ ছিল, প্রমাণ ছিল না। ভাবা যায়!
বিচারহীনতার সংস্কৃতি ভাঙার সময়টা আসলে এখন। এই সময়টা যদি আমরা কাজে না লাগাই, তবে সামনে আসবে আরো ভয়াবহ সব ঘটনা। তখন চুপচাপ হজম করা ছাড়া উপায় থাকবে না। আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। আমাদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা দেখে ঈর্ষা করে উন্নত বিশ্ব। ক্রিকেটে আমরা কাঁপিয়ে দেই বড় বড় দলকে। আমাদের এত এত গর্ব সব লজ্জায় পরিণত হচ্ছে বিচারহীনতার অসভ্যতায়। এখন তাই সময় হলো অন্য বিচার চাওয়ার। যে বিচার হবে বিচারহীনতার। চলুন, আমরা এবার নতুন আড্ডাবাজি শুরু করি। যে আড্ডায় কেবল বিচারহীনতার বিরুদ্ধে আমাদের বিচার চাওয়ার দাবি থাকবে। তবেই আমাদের মানবিকতা অর্থ পাবে, আমাদের হাহাকার যৌক্তিক হবে।
Comments
Post a Comment