তুষার ইমরান প্রথম শ্রেণির
ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরির মালিক, শাহরিয়ার নাফীস ফর্মে ফিরে
খেলতে খেলতে আবার ফর্ম হারিয়ে ফেলেন,
রকিবুল হাসান ইনিংসের পর ইনিংস ভালো
খেলে যান, রাজ্জাক দিনের পর দিন উইকেট নিতে থাকেন; কিন্তু
তাদের কথা বিসিবির মনেই থাকে না। বিসিবির মনে থাকে না নাসিরের কথাও। এমন কি
স্কোয়াডে থাকা মুমিনুল বা রুবেল হোসেনকেও একাদশে খেলানোর কথা বিসিবির মনে পড়ে না।
বিসিবির মনে থাকে কেবল
নিরীক্ষা করার কথা। বিসিবি যেনো গবেষণা সংস্থা, জাতীয় দল যেনো গবেষণাগার আর
ক্রিকেটাররা সব গিনিপিক। ধরো, জাতীয় দলে ঢোকাও,
কাটো- ফারো- ছিঁড়ো; বাদ
দিয়ে নতুন কাউকে নাও; এই যেনো বিসিবির নীতি।
অথচ তুষার, নাফীস, রাজ্জাক, রকিবুল, নাসিররা
যে বছরের পর বছর খেলে কতো অভিজ্ঞতা অর্জন করলেন, তা যেনো কেবল ঘরোয়া ক্রিকেটের
জন্যই। মাঝে মাঝে খুব দুঃখ হয় এবং দুঃখ পেতে পেতে দেখি যে, নিউজিল্যান্ড
ছয় বছর পর নিল ব্রুমকে ফেরায়, সাত বছর পর রঙিন জার্সি গায়ে দেন জিতান প্যাটেল। দলের
হয়ে সেরা পারফর্মারও হয়ে উঠেন তারা।
চলতি জাতীয় লিগের সর্বশেষ
ম্যাচে সাত উইকেট নিলেন আব্দুর রাজ্জাক। এর মধ্যে এক ইনিংসে নিয়েছেন পাঁচটি। যা
তার প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারের ২৬তম পাঁচ-উইকেট! কিংবদন্তীতূল্য এই স্পিনারই
ওয়ানডেতে বাংলাদেশের হয়ে প্রথম ২০০ উইকেট নেয়া বোলার। তারপরও নির্বাচকদের নজরে
পড়েন না তিনি। ফারুক আহমেদ থাকতেও অচ্ছুৎ হয়ে ছিলেন রাজ্জাক, মিনহাজুল
আবেদীন দায়িত্ব নেয়ার পরও বদলায়নি পরিস্থিতি।
রাজ্জাক তো তাও ক্যারিয়ারের
সেরা সময় কাটিয়ে এসেছেন কিন্তু তুষার ইমরান?
টেস্ট খেলেছেন সর্বসাকুল্যে পাঁচটি।
ওয়ানডে খেলেছেন ৪১টি। কখনোই নিজের প্রতিভার সেরাটা দিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। হঠাৎই
পথ-টথ হারিয়ে হয়ে গেছেন ‘ঘরোয়া ক্রিকেটার’। এই ত্বকমা
লেগে যাওয়ার পর তাকে আর কোনোভাবেই,
কোনো দলেই বিবেচনা করছেন না
নির্বাচকরা। চলতি জাতীয় লিগে পরপর দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। প্রথম শ্রেণির
ক্রিকেটে তার সেঞ্চুরির সংখ্যা এখন ১৯টি। যা বাংলাদেশের রেকর্ড। বাংলাদেশের আর
কারো প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে এতো সেঞ্চুরি নেই। কিন্তু তুষারের এমন পারফর্মের
কোনোই মূল্য নেই নির্বাচকদের কাছে।
বেচারা তুষার ইমরানকে
সাংবাদিকরাও এখন আর জিজ্ঞেস করেন না যে,
তিনি জাতীয় দলে ফেরার স্বপ্ন দেখেন
কিনা। পাছে তুষার যদি আবার লজ্জা পান! পরিস্থিতি আসলেই এমন করে ছেড়েছে বাংলাদেশ
ক্রিকেট বোর্ড।
২০১৫ সালের মার্চ থেকে জাতীয়
লিগের সর্বশেষ ম্যাচ পর্যন্ত শাহরিয়ার নাফীস মোট ২১টি প্রথম শ্রেণির ইনিংস
খেলেছেন। তাতে তার সেঞ্চুরি তিনটি। এর মধ্যে দুটি সেঞ্চুরি হলো ১৬৮ ও ১৭৪* রানের।
অন্য সেঞ্চুরিটি ১০১* রানের। আছে সাতটি হাফ সেঞ্চুরিও। এর মধ্যে দুটি আবার ৮০-এর
উপরে। সর্বশেষ বিপিএলেও খেলেছেন দুর্দান্ত কয়েকটি ইনিংস। নাফীস ভাবতেন পারফর্ম
করলে আবার জাতীয় দলে ফিরবেন তিনি। পারফর্ম করতে করতে নাফীস আবার ফর্ম হারিয়ে আবার
নতুন যুদ্ধে নেমেছেন, কিন্তু তার পারফর্ম আর চোখে পড়েনি বাংলাদেশ ক্রিকেট
বোর্ডের। এক বিপিএলে ভালো খেলে বা ঘরোয়া ক্রিকেটের এক আসরে একটু নজর কেড়েই নাফীসের
চোখের সামনে দিয়ে কতোজন জাতীয় দলে ঢুকে যাচ্ছেন, কিন্তু তার জন্য জাতীয় দলের
দরজাটা সংকুচিতই হয়ে থাকছে।
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগকে ধরা হয়
ঘরোয়া ক্রিকেটের সবচেয়ে জমজমাট আসর হিসেবে। এই আসরে দারুণ কিছু করা মানেই জাতীয়
দলের কড়া নাড়া। তো সর্বশেষ ঢাকা লিগে এক সেঞ্চুরি এবং পাঁচ হাফ সেঞ্চুরিতে সবচেয়ে
বেশি রান করলেন রকিবুল হাসান। কিন্তু তার এই পারফর্মে জাতীয় দলের কড়া নড়লো-টড়লো
না। নির্বাচকরা তার পারফর্ম দেখে হয়তো ভাবলেন, আরে, এতো
আগে খেলেছে! তারপরও প্রাথমিক- না কী এক দলে একবার ডাকা হলো তাকে। সেখান থেকে আবার
বাদ। চলতি জাতীয় লিগের সর্বশেষ রাউন্ডেও সেঞ্চুরি এসেছে রকিবুলের ব্যাট থেকে।
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে বাংলাদেশের একমাত্র ট্রিপল সেঞ্চুরিয়ান জানেন না আর কতো
পারফর্ম করলে জাতীয় দলে ফিরবেন তিনি। তিনি এটাও জানেন না যে, জাতীয়
দলে ঢোকার মানদণ্ড ভালো পারফর্ম করা নাকি অদৃশ্য আরো কিছু আছে!
রাজ্জাক- তুষার- নাফীস ও
রকিবুলদের মতো বিস্মৃত হয়ে না গেলেও নাসিরের অভিজ্ঞতাও মূল্যহীন হয়ে গেছে
নির্বাচকমণ্ডলীর কাছে। জাতীয় লিগের সর্বশেষ রাউন্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করে নাসির
চেষ্টা করেছে নির্বাচকদের চোখে আঙুল দিতে। কিন্তু জোর করে চোখ বন্ধ করে রাখা
নির্বাচকদের মনে হয় না তাতে সম্বিত ফিরবে।
একদিকে আমরা রাজ্জাক- তুষার-
নাফীস- রকিবুলদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগছে না বলে হাহাকার করি, অন্য
দিকে অনভিজ্ঞতার কারণে নিউজিল্যান্ড সফরে গিয়ে ২৪২ চেজ করতে গিয়ে ৬৭ রানে সিরিজ
খুইয়ে বসেন মাশরাফিরা! চোখের সামনে নিল ব্রুম ও জিতান প্যাটেলকে ফিরতে দেখা কিংবা
অনভিজ্ঞতার কারণে কিউইদের কাছে সিরিজ হার দেখে রাজ্জাক- তুষার- নাফীসদের কি দুঃখ
বাড়ে না? নাকি তাদের এখন আর সেই অনুভূতিটাই নেই?
রাজ্জাক- তুষারদের সেই অনুভূতি
না থাকাই মনে হয় স্বাভাবিক। যেখানে নাসির- রুবেল- আল আমিন আর মুমিনুলরাই নির্বাচক-
কোচের মন গলাতে পারেন না, সেখানে তারা তো কোথাকার কারা!
Comments
Post a Comment