কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প: কী আছে এই বইয়ে

আশুলিয়া, সাভার

কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প- প্রথম আলোর ক্রীড়া সম্পাদক উৎপল শুভ্রর লেখা নতুন বই। কী আছে এতে? ১৪০ পৃষ্ঠার বইটি নিয়ে এমন প্রশ্নে কী বলা যায়— বুঝতে পারছি না!

বইটির প্রথম ফ্ল্যাপের লেখাটা শুরু হয়েছে এ ভাবে, ‘উপন্যাস? না, উপন্যাস নয়। ইতিহাস? না, ইতিহাসও নয়। বইটিকে আসলে নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায় বাঁধা কঠিন।’

এটুকু থেকেই নিশ্চয় বইটি সম্পর্কে হালকা ধারণা পাওয়া গেলো। কিন্তু বইটি পড়ে আমার মনে হয়েছে, এটি ইতিহাসে ভর করা এক সুখপাঠ্য উপন্যাস। এটাও মনে হয় ঠিকঠাক হলো না। কারণ, উপন্যাসে তো বাস্তব জীবনের উপাদান খুব কম থাকে। বেশি থাকে কল্পনার বিস্তৃত জগত। চরিত্রগুলো হয় লেখকের একেকটা ‘ব্রেইন চাইল্ড’।

সে দিক থেকে তুলনা করলে, কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্পের উপন্যাস না হওয়ার একটা কারণ খুঁজে পাওয়া যায়; এর একটা চরিত্রও কাল্পনিক নয়। যদিও চরিত্ররা, মানে— ডব্লিউ জি গ্রেস, চার্লস ব্যানরম্যান, ভিক্টর ট্রাম্পাররা যেখানে আড্ডা দিয়ে বেড়ান বা ক্রিকেট খেলতে নেমে পড়েন, সেই পটভূমিটা কাল্পনিক। হয়তো অতিকাল্পনিকই!

আবার যদি এই বইটিকে ইতিহাসের খটমট এক পাঠ্য বলি, তাহলেও ঠিকঠাক বলা হবে না। ইতিহাসের ক্লাসে বিরক্ত হয়ে পড়ার বহু স্মৃতি নিশ্চয় আমাদের আছে। কিন্তু কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প পড়তে পড়তে বহু ইতিহাস জানা হলেও, বিরক্তি ভর করবে না মোটেও। তাই একটানে শেষ করে ফেলার আশ্চর্য এক শক্তি পেয়ে যাবেন পাঠক। যে রকমটা টানটান উত্তেজনা আর নিটল প্রেমের উপন্যাসের ক্ষেত্রে হয়!

আরো একটা ব্যাপার বলা দরকার। উপন্যাস পড়লে কী হয়— আমরা নিজস্ব চরিত্রের সঙ্গে মিলে যায়, এমন কোনো চরিত্রের জায়গায় নিজেকে কল্পনা করে করে পড়তে থাকি। এইভাবে পড়তে দারুণ মজা লাগে।

কিন্তু কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প পড়তে পড়তে আপনি কোনো চরিত্রে হারিয়ে যেতে পারবেন না। সেটার আসলেই দরকারই পড়বে না। জি গ্রেস, ভিক্টর ট্রাম্পার বা ব্রাডম্যান; কোন চরিত্রের সঙ্গে নিজেকে মেলানোর সাহস আছে আমাদের!

মজার ব্যাপার হলো, এই চরিত্রগুলোর সঙ্গে নিজেকে মেলাতে না পারলেও পাঠক নিজেকে বঞ্চিত ভাববার সুযোগ পাবেন না। বরং কল্পলোকে তাদেরকে একসঙ্গে আড্ডা দেয়ার দৃশ্য ভেবে এবং সেটার দর্শক হতে পেরেই পাঠক পুলক অনভুব করবেন। আমার এমনই হয়েছে!

যা হোক, কল্পলোকে ক্রিকেটের গল্প বহু মজার মজার স্ট্যাটস দিয়ে ভরা। স্ট্যাটস যাদের কাছে মাথা ঘুরিয়ে দেয়ার ব্যাপার, তারাও নির্ভয়ে বইটি হাতে তুলে নিতে পারেন। কারণ লেখক স্ট্যাটসকে দারুণ উপভোগ্য করে উপস্থাপনের অনন্য মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন এই বইয়ে। দেখিয়েছেন কল্পনা শক্তির অনবদ্য প্রয়োগও!

বইটির একেবারে শেষে এসে পাঠক একটা শক খাবেন; কী, উপন্যাসের চরিত্র মনে হচ্ছে? হতেই পারে। বইটা উপন্যাস কিনা, সেই প্রশ্ন তো শুরুতেই উঠে গেছে! শকটা কী, সেটা না বললাম!

কোনো বইয়ের রিভিউ লেখার পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই আমার। এই লেখাটা আসলে রিভিউ না-ও। পাঠক হিসেবে খুব সাধারণ কিছু দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

শেষে আরো একটা কথা বলে দিতে চাই, ক্রিকেট রোমান্টিকদের বইটি পড়া উচিত। একই সঙ্গে ক্রিকেট নিয়ে যাদের আগ্রহ কম, তারাও এটি পড়তে পারেন। বইটা শেষমেষ শুধু ক্রিকেটেরই নয় মনে হয়; সুখপাঠ্য একটা সাহিত্যকর্মও।

বইটি প্রকাশ করেছে- প্রথমা। প্রথম প্রকাশ: একুশে বইমেলা ২০১৭

Comments